অনলাইন ডেস্ক :
রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধের সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর বাল্য বিয়ে হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃদ্ধের নাম আবু মিয়া আর কিশোরীর নাম সালমা।
গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার কিশোরী সালমার সঙ্গে বিয়ে হয় আবু মিয়ার। সালমাকে এক বিঘা ফসলি জমি ও বাড়ির দুই শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছেন বৃদ্ধ স্বামী আবু মিয়া।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আমরা কিছুই জানি না। স্থানীয় বাল্য বিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে, তাদেরকে জানানোর জন্য কি আরেকটি বিভাগ খুলতে হবে?
অনুসন্ধানে ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, নোয়াগাঁও মুতাঈদ বাড়ির অলি আহমেদের ছেলে আবু মিয়া চার সন্তানের জনক। তার রয়েছে অর্ধ ডজনেরও অধিক নাতি নাতনি। আবু মিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি করতেন। ৪৫ বছর চাকরি করার পর ২০০৫ সালের জুন মাসে তিনি অবসরে যান। তার স্ত্রী ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। বছরখানেক আগে অসুস্থ হয়ে প্রথম স্ত্রী মারা যান।
কিছুদিন পরই আবু মিয়া একই গ্রামের দিনমজুর রফিকুলের মেয়ে সালমাকে (১৩) বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বছরখানেক আগে সালমার বাল্য বিয়ে হয়েছিল নরসিংদীর এক ছেলের সঙ্গে। ছেলেটি মাদকাসক্ত ও দরিদ্র হওয়ায় বিয়ের তিন দিন পরই সালমা বাবার বাড়িতে চলে আসে। এক মাস আগে ওই ছেলেকে ডিভোর্স দেয় সালমা। সালমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে-পড়ে লেগে যায় বৃদ্ধ আবু মিয়া। মেয়েকে যৌতুক দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এক পর্যায়ে সালমার পরিবার সম্মত হলেও বেঁকে বসেন কাজী। কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সালমা ডিভোর্স দিয়েছে মাত্র এক মাস আগে। তিন মাস না হলে দ্বিতীয় বিয়ের বিধান নেই জেনে আবু মিয়া আশ্রয় নেয় নোটারি পাবলিকের।
১৩ বছর বয়সী কিশোরী ও ৮৫ বছরের বৃদ্ধের এমন বিয়ে নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে গোটা উপজেলায়। এ দম্পত্তিকে এক নজর দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে এসে ভিড় করেন উৎসুক লোকজন। অথচ উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
এ বিষয়ে বৃদ্ধ আবু মিয়া অল্প বয়সী সালমাকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করে বলেন, সব মিলিয়ে ৪৫ বছর শুধু চাকরিই করেছি। এখন একা। তাই বিয়ে করে ফেললাম।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খবর নিয়ে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, এ ধরনের বাল্য বিবাহ সমাজে কোনভাবেই কাম্য নয়। এ বিয়ের জন্য ছেলে ও ছেলের পরিবার এবং মেয়ের পরিবারের পাশাপাশি বিয়ে নিবন্ধনকারী কাজীও সমানভাবে অপরাধী। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও তৈরি করা জরুরি। বাল্য বিবাহ বন্ধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পাঠকের মতামত: